শব্দসন্ত্রাসের কবলে কক্সবাজারবাসী শব্দের স্থিতি ক্ষণস্থায়ী হলেও শব্দদূষণ মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পরিবেশের অন্যসব দূষণের মতো শব্দদূষণকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝানো যায় না। ক্ষতিকর দিকটি যায় না দেখানোও। শুধু শ্রবণের মাধ্যমে এটিকে অনুধাবন করা যায়। কক্সবাজার শহরে হাজার হাজার মোটরবাইক এ এ্যাম্বুলেন্স সাইরেন সংযুক্ত করে শব্দদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় পরিবেশবাদীরা একে শব্দসন্ত্রাস হিসাবে অভিহিত করেছেন। যার ফলে শহরের স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের বধিরতা দেখা দিচ্ছে বলা জানা যায়, শব্দদূষণ মানুষের অসচেতনতার বহির্প্রকাশ।
কারণ এখনো অনেকেই জানেন যে, শব্দদূষণের ফলে মানুষের কি ধরনের সমস্যা হতে পারে। অথবা যে মানুষটি তীব্র শব্দদূষণ করে যাচ্ছেন তিনি নিজেও জানেন না যে, এটি মারাত্মক অপরাধের আওতায় পড়ে। শহরের ৮হাজারেরও অধিক টমটমেও নিষিদ্ধ সাইরেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই জানেন না এ অপরাধের কথা। ফলে শব্দদূষণের শিকার হয়েও আমরা আইনি প্রতিকার পাচ্ছি না যথাযথভাবে। আমরা জানি মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। তারপরেও মানুষ অনায়াসে ৬০-৭০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা সহ্য করে যাচ্ছেন। এ মাত্রার বেশি শব্দদূষণ হলে মানুষ ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
জানা যায়, ৮০ ডেসিবেলের অতিরিক্ত মাত্রার শব্দ মানুষের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তথাপিও আমাদের হজম করতে হচ্ছে এমনকি কক্সবাজার নয় চট্রগ্রাম শহরেও এর অনিয়ম বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাস্তার পাশে কিংবা অলিতে-গলিতে ভিসিডি প্লেয়ারে স্টেরিও আওয়াজ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। নিয়ম লঙ্ঘন করে যত্রতত্র গাড়ির হর্ন বজানো হচ্ছে। টাইলস বসানো, ইট ভাটার মেশিন কিংবা বড় বড় দালান নির্মাণের ক্ষেত্রে পাইলিং মেশিনের উচ্চমাত্রার আওয়াজ মানুষকে নাজেহাল করে দিচ্ছে। এ ছাড়াও উড়োজাহাজের বিকট আওয়াজ মানুষের কানের পর্দার সম্মুখ কোষগুলোতে আঘাত হানার ফলে বড় ধরনের স্পন্দনের সৃষ্টির মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে সঞ্চালিত হয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিচ্ছে। দেশের অন্যান্য স্থানের অবস্থাও প্রায় তদ্রুপ।
রাস্তাঘাটে বেরুলেই যত্রতত্র শোনা যায় মাইকিং, ভটভটি বা নসিমন, টমটম গাড়ির অস্বস্তিকর আওয়াজ, বিয়েশাদিতে উচ্চস্বরে গান-বাজনা, স-মিলের বিদঘুটে আওয়াজ। ইত্যাদি সব আওয়াজ অনবরত শ্রবণের ফলে মানুষ তার শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে। এ ধরনের বিরতিহীন শব্দদূষণের ফলে মানুষ উচ্চরক্তচাপ, শিরপীড়া, মানসিক অসুস্থতা, স্নায়ুবিক বৈকল্য, আত্মহত্যার প্রবণতা, আক্রমণাত্মক মনোভাবের উদ্রেক, হৃদরোগসহ নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অপরদিকে শিশু-কিশোরদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে শব্দদূষণের তালে। শুধু মানুষই নয় জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেও শব্দদূষণ মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অবাধে এ দূষণের শিকার হতে দেখে মনে হচ্ছে দেশে এ বিষয়টা দেখার কেউ নেই। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মাঝে ঝটিকা অভিযানে নামে, সেরকম তথ্য আমরা জানতে পেরেছি।
বেশ কিছুদিন পূর্বে রাজধানীতে পরিবেশ অধিদপ্তর মোবাইল কোর্ট বসিয়ে প্রধান সড়কগুলোতে চলাচলকারী যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্নের অত্যাচার বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন। উদ্যোগী হয়েছেন শহরের বিভিন্ন বাণিজ্য বিতানের স্থাপিত জেনারেটরের উচ্চমার্গের শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য। সাধুবাদ জানাতে হয় তাই তাদের। তারা জরিপ চালিয়ে এতদাঞ্চলে পরিমাপ চালিয়ে শাব্দিক অত্যাচার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি পেয়েছেন বলে কক্সবাজারের পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম।।
অর্থাৎ পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে কক্সবাজারে কোথাও সহনীয় মাত্রার আওয়াজ পায়নি। বরং পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দের আওয়াজ পেয়েছে ৭৫-৯৫ ডেসিবেল। ভাবতে আবাক লাগছে যে, প্রতিনিয়ত এ মাত্রার শব্দদূষণের শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এভাবে কক্সবাজারে শব্দদূষণ বাড়তে থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে নগরীর অর্ধেক মানুষ শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলবেন।পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসেব মোতাবেক যে কোন শহরের আবাসিক এলাকার শব্দেরমাত্রা দিনে সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবেল পর্যন্ত সহনীয়। অপরদিকে শয়নকক্ষের জন্য আলাদা পরিমাপ রয়েছে। সেটি ২৫ ডেসিবেলের উপরে অনুমোদিত নয়। অফিস আদালতের ক্ষেত্রে ৩৫-৪০ এবং হাসপাতালের জন্য অনুমোদিত শব্দের পরিমাপ ধরা হয়েছে ২০-২৫ ডেসিবেল। অথচ এ সবের ধারেকাছেও নেই শহরের শব্দের মাত্রা। বরং বহুগুণ শব্দের তালে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী। এ পরিমাপ শুধু বাংলাদেশর জন্যই নয়, এটি সমগ্র দেশ তথা সমগ্র বিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য।শব্দদূষণের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যথেষ্ট সোচ্চার। সংস্থাটি এ ব্যাপারে সতর্কবাণী প্রেরণ করছেন বিশ্বের সমগ্র দেশে। শব্দদূষণের ক্ষতির দিক চিহ্নিত করতে ইউনিসেফ এবং বিশ্বব্যাংক একাধিকবার গবেষণায় জড়িত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে ৩০টি জটিল রোগের অন্যতম কারণ পরিবেশ দূষণ। তন্মধ্যে শব্দদূষণ অন্যতম। জরিপে দেখা গেছে, শব্দদূষণের শিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাও। সেখানে এরই মধ্যে ১১ শতাংশ লোক তাদের শ্রবণশক্তি হারিয়েও ফেলেছেন। দুর্ভাগ্যজনক সত্যটি হচ্ছে আমাদের দেশে এ ধরনের পরিসংখ্যান না থাকাতে তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি। তবে এটি বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনোক্রমেই আমাদের দেশে শব্দদূষণে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। তাই পরিবেশবাদীদের দাবি, শব্দদূষণে আক্রান্তের সংখ্যা নিরূপণ করে সঠিক পরিসংখ্যান পেশ করা। পাশাপাশি সমগ্র দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শব্দদূষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। তাতে করে শব্দদূষণের মাত্রা অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে জানান অনেকে।
এবিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র মাহাবুব জানান,অতি শীঘ্রই তিনি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন যাতে কক্সবাজার পৌর সভার জনগনের মানোন্নয়ন করার লক্ষ্যে সেখানে শব্দ দুষণের বিষয়েও সতর্কীকরণ নিচ্ছে বলে জানান। কক্সবাজার মেসেজ
পাঠকের মতামত